চট্টগ্রাম ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিঃ
দৈনিক সারাদেশ ৭১  নিউজ পোর্টালে আপনাকে স্বাগতম।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষমান দেশের প্রথম সারির অনলাইন পোর্টাল পত্রিকার জন্য সংবাদদাতা আবশ্যক, বিশেষ সংবাদদাতা (৪),  ক্রাইম রিপোর্টার (৫), স্টাফ রিপোর্টার (১০), বিভাগীয় ব্যুরো (৬) উপজেলা প্রতিনিধি (১০), বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি (৫),  মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার (সকল জেলা ও উপজেলার জন্য) (১০) ইউনিয়ন প্রতিনিধি (৫)  আবেদনের জন্য সিভি, জাতীয় পরিচয় পত্র, আবেদন পাঠাবেন news@saradesh71.com এই মেইলে।
সংবাদ শিরোনামঃ
ভোলাহাটে ভার্কের সমৃদ্ধি কর্মসূচীর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ২০২৫ উদযাপন বগুড়ার গাবতলী থানা মোড়ে যানজট নিরসনে নতুন সিএনজি স্ট্যান্ড উদ্বোধন কুমিল্লা সীমান্তে ১০-বিজিবির অভিযানে ৬০ লাখ টাকার ভারতীয় মোবাইল ফোন ও ডিসপ্লে উদ্ধার পটিয়া ভূমি অফিসে দালাল বিরোধী অভিযান: ভ্রাম্যমাণ আদালতে আটক ১ জন কোটালীপাড়ায় দুই মাদকসেবী আটক, ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা ছাতকে ভারতীয় তৈরি ৪২ হাজার ‘শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি’সহ যুবক আটক বোয়ালমারীতে ঝড়ে গাছ পড়ে ব্যক্তিগত পুকুরে, সাংবাদিকদের দাবিতে উত্তেজনা – সাবেক কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ফেনীতে অ্যাম্বুলেন্সে লুকানো ডাকাতির সরঞ্জামসহ আটক ৩ জন কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে বেঁধে নির্যাতন, মূল হোতা বোরহান উদ্দিন গ্রেফতার ঝালকাঠিতে ব্র্যাকে স্বপ্নসারথি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বললেন— স্বপ্ন দেখতে হবে বড় —

চায়ের দোকান দিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছেন শিক্ষিত যুবক শহীদুল

এমএ পাস চাওয়ালা: শিক্ষিত যুবকের অনুপ্রেরণার গল্প রাজধানীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৩:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
“মাস্টার্স পাস একজন যুবক চায়ের দোকান দিবেন”—শুনলেই অনেকে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকেছেন। কেউ বলেছিলেন, “কফি শপ বা আধুনিক কোনো ক্যাফে হলে মানাতো, কিন্তু চায়ের দোকান?” কিন্তু সব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাহ্য করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সৎ উপার্জন ও আত্মসম্মানের কাছে সমাজের কথার কোনো মূল্য নেই।

শিক্ষাজীবন থেকে সংগ্রামের পথ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শহীদুল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। আবেদন করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চাকরি জোটেনি। তবুও হাল ছাড়েননি।

একসময় তিনি ফ্রিজের দোকান খোলেন। কিছুদিন সেই ব্যবসা চালালেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। পরে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করতে করতেই আবারও স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অনলাইন স্কুল গড়ে তোলার। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার কারণে তা সফল হয়নি।

নতুন স্বপ্নের নাম ‘এমএ পাস চাওয়ালা

দীর্ঘ সংগ্রামের পর সহিদুল নিলেন নতুন সিদ্ধান্ত—চায়ের দোকান দেবেন। তবে এই সিদ্ধান্তও সহজ ছিল না। পরিবার থেকে পরামর্শ এসেছিল, “যদি করতেই হয়, তবে অন্তত ক্যাফে ধরনের কিছু করা হোক।” কিন্তু সহিদুল তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

অক্টোবরের শুরুতে রাজধানীর ভাটারা কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে যাত্রা শুরু করে ‘এমএ পাস চাওয়ালা’। দোকান ভাড়া করতেও তাকে পড়তে হয় নানা বাধার মুখে। মালিকেরা যখনই জানতে পারতেন দোকানটি হবে চায়ের, তখনই ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করতেন। কেউ কেউ আবার ফোন ধরা বন্ধ করে দিতেন। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি।

সহিদুল বলেন, “এই নামের পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, নাম শুনেই যেন সবাই আকৃষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত বেকার তরুণরা যেন অনুপ্রাণিত হয় এবং কোনো কাজকে ছোট না ভাবে।”

সাজানো দোকান আর বিচিত্র স্বাদের চা

সহিদুলের দোকান সাজানো হয়েছে যত্ন নিয়ে। তামার তৈরি আরবি কেতার কেটলি, নানা রকম চা তৈরির সরঞ্জাম, পরিপাটি আসবাব—সব মিলিয়ে দোকানটি আলাদা আমেজ তৈরি করেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা নিয়মিত ভিড় করছেন এখানে।

চায়ের তালিকায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় স্বাদ—ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, স্পেশাল মাসালা দুধ চা, গরুর দুধ চা। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে আইস টি, মকটেল, জুস, লাচ্ছি, মিল্ক শেক, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মটু শর্মা, মটকা মিট বক্স এবং বিশেষ মাংসের শিঙাড়া।

স্থানীয়দের প্রশংসা

পাশের মুদি দোকানের কর্মী মানিক বলেন, “এমএ পাস চাওয়ালা নামটাই আলাদা। এতে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক উৎসাহ পাবে। বসে না থেকে নিজের মতো কিছু করবে।”

মানিকের মতে, অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছোটখাটো কাজ করলে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু সহিদুল সেই মানসিকতার বেড়াজাল ভেঙে ফেলেছেন। তাই তিনি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

পরিবার ও অনুপ্রেরণা

সহিদুলের এই সংগ্রামের পেছনে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর স্ত্রী শ্যামলী আক্তার। তিনি সবসময় স্বামীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, সংকটের সময়ে সাহস যুগিয়েছেন। শহীদুলও অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর পাশে না থাকলে এই উদ্যোগ সম্ভব হতো না।

অনুপ্রেরণার আলো

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই “এমএ পাস চাওয়ালা” আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, সহিদুলের এই উদ্যোগ শিক্ষিত বেকার যুবকদের নতুন দিশা দেখাবে। প্রমাণ করবে, কোনো কাজ ছোট নয়—অসৎভাবে আয় করাই আসল লজ্জা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

চায়ের দোকান দিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছেন শিক্ষিত যুবক শহীদুল

এমএ পাস চাওয়ালা: শিক্ষিত যুবকের অনুপ্রেরণার গল্প রাজধানীতে

আপডেট সময় : ০৩:৪১:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:
“মাস্টার্স পাস একজন যুবক চায়ের দোকান দিবেন”—শুনলেই অনেকে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকেছেন। কেউ বলেছিলেন, “কফি শপ বা আধুনিক কোনো ক্যাফে হলে মানাতো, কিন্তু চায়ের দোকান?” কিন্তু সব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অগ্রাহ্য করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, সৎ উপার্জন ও আত্মসম্মানের কাছে সমাজের কথার কোনো মূল্য নেই।

শিক্ষাজীবন থেকে সংগ্রামের পথ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শহীদুল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। আবেদন করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত চাকরি জোটেনি। তবুও হাল ছাড়েননি।

একসময় তিনি ফ্রিজের দোকান খোলেন। কিছুদিন সেই ব্যবসা চালালেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। পরে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করতে করতেই আবারও স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অনলাইন স্কুল গড়ে তোলার। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার কারণে তা সফল হয়নি।

নতুন স্বপ্নের নাম ‘এমএ পাস চাওয়ালা

দীর্ঘ সংগ্রামের পর সহিদুল নিলেন নতুন সিদ্ধান্ত—চায়ের দোকান দেবেন। তবে এই সিদ্ধান্তও সহজ ছিল না। পরিবার থেকে পরামর্শ এসেছিল, “যদি করতেই হয়, তবে অন্তত ক্যাফে ধরনের কিছু করা হোক।” কিন্তু সহিদুল তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

অক্টোবরের শুরুতে রাজধানীর ভাটারা কেন্দ্রীয় মসজিদের কাছে যাত্রা শুরু করে ‘এমএ পাস চাওয়ালা’। দোকান ভাড়া করতেও তাকে পড়তে হয় নানা বাধার মুখে। মালিকেরা যখনই জানতে পারতেন দোকানটি হবে চায়ের, তখনই ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করতেন। কেউ কেউ আবার ফোন ধরা বন্ধ করে দিতেন। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি।

সহিদুল বলেন, “এই নামের পেছনে দুটি কারণ আছে। প্রথমত, নাম শুনেই যেন সবাই আকৃষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত বেকার তরুণরা যেন অনুপ্রাণিত হয় এবং কোনো কাজকে ছোট না ভাবে।”

সাজানো দোকান আর বিচিত্র স্বাদের চা

সহিদুলের দোকান সাজানো হয়েছে যত্ন নিয়ে। তামার তৈরি আরবি কেতার কেটলি, নানা রকম চা তৈরির সরঞ্জাম, পরিপাটি আসবাব—সব মিলিয়ে দোকানটি আলাদা আমেজ তৈরি করেছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীরা নিয়মিত ভিড় করছেন এখানে।

চায়ের তালিকায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় স্বাদ—ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, স্পেশাল মাসালা দুধ চা, গরুর দুধ চা। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে আইস টি, মকটেল, জুস, লাচ্ছি, মিল্ক শেক, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মটু শর্মা, মটকা মিট বক্স এবং বিশেষ মাংসের শিঙাড়া।

স্থানীয়দের প্রশংসা

পাশের মুদি দোকানের কর্মী মানিক বলেন, “এমএ পাস চাওয়ালা নামটাই আলাদা। এতে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক উৎসাহ পাবে। বসে না থেকে নিজের মতো কিছু করবে।”

মানিকের মতে, অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছোটখাটো কাজ করলে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না। কিন্তু সহিদুল সেই মানসিকতার বেড়াজাল ভেঙে ফেলেছেন। তাই তিনি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা।

পরিবার ও অনুপ্রেরণা

সহিদুলের এই সংগ্রামের পেছনে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর স্ত্রী শ্যামলী আক্তার। তিনি সবসময় স্বামীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন, সংকটের সময়ে সাহস যুগিয়েছেন। শহীদুলও অকপটে স্বীকার করেন, তাঁর পাশে না থাকলে এই উদ্যোগ সম্ভব হতো না।

অনুপ্রেরণার আলো

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই “এমএ পাস চাওয়ালা” আলোচনায় এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকেই মনে করছেন, সহিদুলের এই উদ্যোগ শিক্ষিত বেকার যুবকদের নতুন দিশা দেখাবে। প্রমাণ করবে, কোনো কাজ ছোট নয়—অসৎভাবে আয় করাই আসল লজ্জা।